নানার বাড়ি মধুর হাড়ি

নানা-নানী , নানুর বাড়ি , মামা , খালাম্মা এই শব্দগুলোর মধ্যেই কেমন একটা ঈদ আনন্দ কাজ করে । ছোট বেলা যখন আম্মা বলত আজকে তর নানুর বাড়ি যামু গুসল করে রেডি হ , সে কি আনন্দ !!!!! ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা । তারা তারি গুসল করে রেডি । ভৈরবের নৌকা নামে এক নৌকা ছিল , আর সেই নৌকার মাঝি ছিল মালেক মাঝি । মাঝি হিসেবে উনার অনেক নাম ডাক তার , ভৈরবের নৌকাটা যখন আলগি বাহান্নাগর পার হতো তখন গৌরীপুর মিলের জেডি দেখা যেত । কিজে আনন্দ লাগতো ! আর একটু বাকি ! নানী বাড়ির মিলের জেডি বলে কথা । যখন মিল ঘাঁটে নেমে একটু সামনে এগুতেই মাতুর মিল ঘরের কোনা থেকেই নানুর বাড়ি দেখতেই কি আনন্দ !!!!!!!!!! তখন নানুর বাড়ির বড় বড় উঠান । গয়াল ঘর( গুয়াল ঘর) , উত্তর ঘর , খেরের পাড়া , হুলার পাড়া , গুবরের ঘই , উঠানে চাডির মধ্যে রং বেরঙের লারু , এদিকে সবার ঘরে জাবার( ধান মজুদ রাখার জন্যে এক প্রকার বাঁশের তৈরি ) , জাবারের বিতরে মুরগি ডিম পারত আর ক ক করত , এসব মিলয়ে চারদিকে এক অন্যরকম সুন্দর্য্য বিরাজ করত , ছিল বাড়ির সামনে রাস্তার মাজখানে একটা তারা গাছ ( কারেন্টের খাম্বা বলে যাকে চিনি ) , সেখানে মোমেন মামা , খাদেম মামা , মোকারম মামা , আরও অনেকে হেলান দিয়ে দাঁড়াই থাকত , তে কোনাইচ্চার গাতার মাছ কোনদিন মারব , পেপছি দইরা ফুটবল খেলা , এসব নিয়ে আলোচনা করত আরো কত কি । এই ফাঁকে পোস্ট মাস্টার অবাইদুল ( যাকে মামারা অবাইদুল মামু বলে ডাকতো ) আইসা বলত ” আইয়ুব মিয়া , হানিফার একটা চিঠি আইছে । ” চিঠি নিয়া নানীর কাছে যখন খাদেম মামা/ কামাল মামা গিয়া বলত ” আম্মা ভাইছাবের চিঠি আইছে ” এই শুনে নানীর চোখে মুখে যে কি আনন্দ !! আজো আমার চোখে ভাসে । চিঠি খুলে পরত আর চোখের পানি জরত । এক চিঠি বার বার পরত আর কান্না করত। ছেলেরা দূর প্রবাসে থাকে , তখনকার আমলে চিঠিই ছিল একমাত্র মাধ্যম , তখন এমন মোবাইল( ইমু ,বাইবার , ফেসবুক ) ছিল না । ফোন করতে হতো ঢাকা ছিদ্দিক বাজার নানুর ভাইয়ের বাসায় গিয়ে । ২ , ৩ মিনিট কথা । এর মধ্যে আমি খাদেম মামা অথবা আম্মার কাছে বলে রাখতাম আমারে যাতে একটু দেই কথা বলতে মামাদের সাথে , আর এদিকে মনে মনে রেডি হয়ে থাকতাম যখনি আমার কাছে দিবে তখনি তারা তারি বইলা ফেলমু “মামা আমার জন্যে একটা উরুজাহাজ (খেলনার বিমান ) পাঠাইয়েন “ …………………এভাবে নানু বাড়ি নিয়ে কত স্মৃতি জরিয়ে আছে !!!!

আজ বহুদিন পর নানুর সেই আগের ছবিখানা দেখে এইসব স্মৃতিগুলো চোখের সামনে জল মল ভেসে উঠছিল ।আজ ফেসবুক , ইমুর যুগের মানুষ গুলো কি কনুদিন জানবে সেই চিঠির যুগের মানুষ গুলো কেমন ছিল , কি চায় তাদের মন এই ফাকা শূন্য বাড়িতে ! আজ আমরা সবাই ব্যস্ত ! বড় ব্যস্ত 🙁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *