নিজের সঙ্গে একটুখানি সময় – বইয়ের ছায়ায় নীরব আলাপন

জীবন, একটানা দৌড়ের নাম।

প্রতিদিনের নিরবচ্ছিন্ন ছুটে চলা, কাজের পাহাড়, দায়-দায়িত্বের ভার যেন আমাদের একটানা পেষে চলে। এমন এক চক্রবূহ্যে আমরা আবদ্ধ, যেখানে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও হারিয়ে ফেলি। অথচ, এই ব্যস্ততার মাঝেই হঠাৎ একটু থেমে যাওয়া, নিঃশব্দে নিজের ভেতরে ডুবে যাওয়া, আর বইয়ের পাতায় চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়াটাই হতে পারে সবচেয়ে গভীর আত্মিক চর্চা।

এই ছবিটি যেন সেই নিঃশব্দ মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি—একটানা ছুটে চলা জীবনের মাঝখানে একটুখানি শান্তির আশ্রয়। শরীর জড়ানো শালের উষ্ণতায়, হাতে ধরা প্রিয় বইটি যেন হয়ে ওঠে আত্মার সঙ্গী। এই অভ্যাসটি এসেছে নানার কাছ থেকে—এক অসামান্য মানুষ, যিনি তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বই পড়তেন। তাঁর জীবন ছিল এক চলমান পাঠশালা, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল শেখার, বোঝার, ভাবার উপলক্ষ।

নানার সেই সাদাকালো দিনগুলোর মতোই আজও আমি বইয়ের পাতায় নিজেকে খুঁজে পাই। কখনও হয়তো পুরনো কবিতা, কখনও উপন্যাস কিংবা দর্শনের গভীর আলোচনা—সবই যেন আমার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বই শুধু জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়, বই মানে সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে একটু নিজের সঙ্গে দেখা করা, নিজের হৃদয়ের শব্দ শোনা।

এই ব্যস্ত জীবনের ভেতরেও, যিনি নিজের জন্যে এমন এক নিঃশব্দ মুহূর্ত তৈরি করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত অর্থে জীবনকে ছুঁতে পারেন। আর সেই অভ্যাস যদি হয় উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া, তবে তা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বয়ে চলা আত্মার বন্ধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *