শৈশবের নিঃশর্ত বন্ধুত্ব। সেই পল্টু মিয়ার কথা !

শৈশব, জীবনের এমন এক অধ্যায়, যেখানে ছোট ছোট ঘটনা ও অনুভূতিগুলো গেঁথে থাকে হৃদয়ের গভীরে। এই বয়সে আমাদের ভালোবাসা, আবেগ আর কল্পনা থাকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ। তেমনই এক অবিচ্ছেদ্য স্মৃতির নাম – পল্টু

ছোটবেলায় আমার কুকুর পালার অদম্য শখ ছিল। একদিন নানুবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ শুনি, পাশের বাড়ির একটি কুকুর অনেকগুলো বাচ্চা দিয়েছে। আমি দেরি না করে ছুটে গেলাম সেখানে। রান্নাঘরের এক কোণে দেখি মা কুকুরটি তার বাচ্চাদের নিয়ে শুয়ে আছে। বাচ্চাগুলো ছোট ছোট, মায়ায় ভরা। তবে সবার মাঝেও আমার চোখ আটকে গেল একটিতে—ছোট্ট, চঞ্চল, যেন একটু অন্য রকম বিচক্ষণতা ছিল তার মধ্যে।

মনেমনে স্থির করলাম, মা কুকুরটি বাইরে গেলেই ওকে নিয়ে আসব। সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে সুযোগ মিলল, এবং আমি চুপিচুপি সেই বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। তখন থেকেই শুরু হলো এক নতুন সম্পর্কের শুরু।

বাড়িতে এনে তাকে আদর যত্নে রাখলাম। নানু যখন ভাত রান্না করতেন, আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ফেনের জন্য, কারণ সেই ফেনই ছিল পল্টুর সবচেয়ে পছন্দের খাবার। ধীরে ধীরে, দিন যায়, মাস যায়—আমার সেই ছোট্ট পল্টু বড় হতে থাকে। আমার হাতের স্পর্শে, আমার ডাকে সাড়া দিয়ে সে হয়ে উঠল আমার পরম বন্ধু, আমার নির্ভরতার আশ্রয়।

একদিন ভাবলাম, ওর নাম রাখলে কেমন হয়। অনেক ভাবনা চিন্তার পর, স্নেহ মিশ্রিত আবেগে ওর নাম রাখলাম পল্টু । নামটা উচ্চারণ করলেই সে নাম শুনে দৌড়ে আসত, লেজ নাড়ত, চেহারায় আনন্দ ফুটে উঠত।

পল্টু কেবল একটি কুকুর ছিল না—সে ছিল আমার শৈশবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এক নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রতীক। তার চোখে আমি দেখতাম ভরসা, শ্রদ্ধা আর বন্ধুত্ব। সেই ছোট্ট জীবনের সঙ্গেই যেন আমি বুঝেছিলাম স্নেহের গভীরতা, যত্নের গুরুত্ব আর বন্ধনের শক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *